Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

উরাল

ডাবের জলটা খেয়ে নাও বৌমা, এই সময় ভীষণ উপকারী| যদিও আমরা ছেলেমেয়ের মধ্যে কোন ফারাক করি না, সে শিক্ষা আমাদের নেই, তবুও প্রথম সন্তান তো, ছেলে হলেই ভালো| অন্ততঃ বিয়ে দেওয়ার খরচাটা বাঁচে| বাব্বা, আজকাল এমনিতেই বাজার দোকানের যা খরচাপাতি, বেরোতে ইচ্ছে করে না| বাজারে যেন আগুন লেগেছে| তার ওপর রয়েছে ওষুধপত্র, উৎসব অনুষ্ঠান সহজ ব্যপার! এরপর যদি দান সামগ্ৰী, তত্ত্ব, খাট-বিছানা-আলমারি কিনতে হয় উপহার দেওয়ার জন্য, তাহলে তো ঢাকের দায়ে মনসা বিকিয়ে যাবে| দেখই তো ছেলেটা সংসার টানতে কত্ত খাটে! 
দেখুন মা, ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন সে তো ঈশ্বরের হাতে| সেখানে আমি আপনি বলার কে? যেই আসুক তাকে ভালো করে মানুষ করলে একদিন দেখবেন সেই আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে| 

সে কি আর আমি জানি না বৌমা| তবে চাকরি পাওয়ার পর আমাদের পাশে দাঁড়াবে না শ্বশুরবাড়ির পাশে সেটাই চিন্তার! দিনকাল মোট্টে ভাল নয়| 

এমনটা বলবেন না মা| বিয়ে হয়েছে বলে কি আর আমি বাবার কথা ভুলে গেছি| চাকরির টাকা দরকারে যেমন শ্বশুরবাড়িতে দিই, তেমনি বাবার চিকিৎসা খাতেও তো ব্যয় করি| আমি ছাড়া তো কেউ নেই করার মতো| জানেনই তো বাবার হার্টের সমস্যা, নিয়মিত কত দামী দামী ওষুধ লাগে!

আমার ছেলেটা বোকা বাঁদর বলে তুমি বিয়ের পরেও সব চালিয়ে যেতে পারছ! নইলে কি আর এমন অবাধ স্বাধীনতা পেতে? চাকরি শেষে রোজ রোজ বাপের বাড়ি যাচ্ছ, বাপের দেখভাল করছ, সব শেষে রাতে খাবার সময় বাড়ি ফিরছ! কত টাকাপয়সা হাতে গুঁজে দিয়ে আসছ কে দেখতে যাচ্ছে? 

আপনি এমন ভাবেন? আমি বাবার হাতে টাকাপয়সা গুঁজে দিই? বাবা যথেষ্ট ভাল পেনশন পান| আমি দিই আমার ভাল লাগে বলে| আজ বললেন তাই জানলাম, নইলে ভাবতাম আপনি অন্ততঃ বোঝেন|

সে আমার বোঝা না বোঝায় কি এসে যায়? তোমার স্বামী তো তোমায় বোঝে! দিব্যি বোঝে| তাহলেই হবে| আজকাল বাবা-মা তো বোঝা| তাদের কথা কে শোনে? এই যে এখন তুমি নিয়মিত যেতে পারছ না বলে সে জামাই হয়ে শ্বশুরবাড়িতে ছেলের কর্তব্য পালন করছে, সারাদিন খাটাখাটনির পরও নিয়মিত শ্বশুরকে দেখে আসছে, যাতে তোমার মন ভাল থাকে| ডাক্তার নাকি এই অবস্থায় মন ভাল রাখতে বলেছে| ফিরতে কত্ত দেরি হয়ে যায়| আর তোমার বাবাকেও বলি, একবারও তো বারণও করে না ছাই!

আপনাদের অসুবিধা হয় জানা ছিল না তো, তাই বলেছিলাম| বাবার দাবার নেশা, ঋক গেলে সঙ্গী পায় এক দু'হাত খেলে, ফিরতে দেরি হয়| আমি বাবাকে বলে দেব| বাবা ঋককে ও বাড়ি যেতে বারণ করবে| তাড়াতাড়ি ফিরবে এবার থেকে...

সে তুমি যা ভাল বোঝ‌ কর! আমি কিন্তু তোমায় কিছু বলিনি| কথায় কথা বাড়ল তাই বলে ফেললাম| শেষে তুমি বরের কাছে আমার নামে নালিশ কর, আর মা ছেলের কাছে খারাপ প্রতিপন্ন হোক, এমনিতেই ছেলের বিয়ে দিলে মায়েদের কোনঠাসা হতে হয়| মা হয়ে একমাত্র ছেলের কষ্ট দেখতে পারি না, এই আমার দোষ| যাইহোক দাও, ডাবের গ্লাসটা দাও| আর ঈশ্বরের কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা কর যেন ছেলেই হয়| 

কেন মা? আপনার মতো আমিও যাতে ভবিষ্যতে কোণঠাসা হই?

কি উল্টোপাল্টা বলছ বৌমা? ওসব অলুক্ষণে কথা কেউ বলে? ছেলের মা হওয়ার কি সোজা কথা? সম্মানই আলাদা| 

তবে যে বললেন বিয়ের পরই ছেলের মা একেবারে কোণঠাসা| বুড়ো বয়সে এক কোণে পড়ে থাকা চাপ| তার চেয়ে মেয়ে হলেই ভাল, অন্ততঃ হাত-পা ছড়িয়ে গোটা বাড়িতে থাকা তো যাবে| 

আজকালকার মেয়েরা বড় তার্কিক, বৌমা| সব কথার উল্টো মানে বের করে| বিরক্ত লাগে| আমি চললুম| টেবিলের ওপর থেকে গ্লাসটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান সবিতা|

শাশুড়ি বেরিয়ে গেলে মুখ বাঁকায় অর্চনা, একটা মেয়ের পাশে যতদিন না আর একটা মেয়ে হিংসা দ্বেষ ভুলে দাঁড়াতে পারবে, রান্নাঘরের দখল নিয়ে যতদিন না পরস্পরের মধ্যে লড়াই চলবে, যতদিন না চিন্তাধারার বদল আসবে ততদিন সমাজ পাখির দুটো ডানার একটা ভাঙাই থাকবে, আকাশে উড়াল দেওয়া সম্ভব হবে না|

                                                        ( সমাপ্ত ) 

▪️উড়াল 
সংগৃহীত
c.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ