Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

প্রায়শ্চিত্ত

গ্রামের সবথেকে মনভুলো
 এবং প্রখর মেধাবী রঞ্জিত মাষ্টার।অগণিত ছেলে মেয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়ে বেতন দিতো না।একদিন.... 
" বাবা তুমি এতো মনভুলো কেনো?তোমার কাছে কত ছেলেমেয়ে পড়ে,কিন্তু টাকা দেয় ১০-১২ জন "

রঞ্জিত মাষ্টার চোখ থেকে চশমা সরিয়ে অবাক হয়ে বলে " বলিস কি মা! "

" ওরা তোমায় ঠকাচ্ছে বাবা "

" এবার থেকে খুব করে মনে রাখবো।সবার থেকে টাকা আদায় করবো "

" সবসময়ই তো বলো।কখনো করো না "

এভাবে দিন যায়।রঞ্জিত মাষ্টারের বয়স বাড়ে।প্রবীণের ছোঁয়া শরীর স্পর্শ করে।চুল পাকে,চামড়ায় ভাজ পরে।মেধা হারিয়ে যায় বয়সের অতল সমুদ্রে।

তার শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা সারা দেশ জুরে।তিনি কখনো কাউকে টাকার কথা বলতেন না।যার ইচ্ছে হয়েছে দিয়েছে,কেউ কেউ অর্ধেক টাকা দিয়ে বাকি অর্ধেক নিজের কাছেই রেখেছে।অতি নিম্নমানের দারিদ্র্য রঞ্জিত মাষ্টারকে গ্রাস করলেও কখনো ছাত্রদের কাছে টাকা চাইতেন না।তিনি মেয়েকে সবসময়ই বলেন " শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছি এই আমার পাওয়া "

" ওরা তোমার টাকা চুরি করে নিজেদের পকেট ভরে।এটা কেমন শিক্ষা? "

" মা রে,এডুকেশনাল শিক্ষা তো দিচ্ছি।সবাইকে ধরে ধরে পারিবারিক শিক্ষা তো আর দিতে পারিনা!তবুও পড়াশোনা করুক,বড় হোক "

বার্ধক্য জনিত কারণে রঞ্জিত মাষ্টার পরলোক গমন করলেন।যুবতী মেয়ে,সঙ্গে এই দরিদ্র সংসার সামলাবে কে!

তার মৃ"ত্যু খবরে দেশ বিদেশ থেকে ছাত্ররা ছুটে আসে।স্মৃতিচারণ করে সেই সময়ের।সবাই বলতে থাকে 

" লোকটা মনভুলো ছিলো।কত ছাত্র তাকে ঠকিয়ে টাকা মেরে খেয়েছে "

রঞ্জিত মাষ্টারের মেয়ে কেঁদে কেঁদে বলে " আমার বাবা মনভুলো ছিলেন না।তিনি ইচ্ছে করেই তার ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ দিয়েছেন।এই লোকটা অভাবের তাড়নায় এক বেলা ভাত খেয়ে আপনাদের পড়িয়েছেন।গ্রামের মানুষটা তো দিন এনে দিন খায়,তাই তিনি চাননি টাকার জোর দিয়ে ছাত্রর পরিবারে কোনো চাপ পড়ুক।তিনি সবসময় চেয়েছেন যেন আপনাদের ভবিষ্যত আলোকিত হয়।টাকার জন্য যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয়।বাবা মৃ"ত্যুর আগে প্রার্থনায় বলেছেন তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।কারো প্রতি তার অভিযোগ নেই।তার ছাত্রছাত্রীরা যেন শেষবারের মতো তাকে দেখতে আসে।বাবা আপনাদের নিজের সন্তান ভাবতেন।আমার বাবা মনভুলো ছিলো না,মনভুলো ছিলো না"

কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা বাবার বু"কে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদে।উপস্থিত সব ছাত্র ছাত্রীর চোখে জল।দেবতুল্য মানুষকে তারা ঠকিয়েছে।এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত হওয়া প্রয়োজন।

একজন ছাত্র বলে উঠলেন " আমি বিভাগীয় কলেজের অধ্যাপক।স্যারের সামনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আপনার পড়াশোনা, বিয়ের যাবতীয় খরচ এই মুহুর্ত থেকে আমি বহন করবো।এতে করে যদি স্যারের প্রতি করা অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি! "

আরেকজন বললো " বোন আমি তোমার জন্য বাড়ি নির্মান করে দিবো "

প্রবাসী এক ছাত্র কল দিয়ে " বোন আমি তো বিদেশে।আমি প্রতিমাসে তোমার একাউন্টে টাকা পাঠাবো৷তুমি এখন থেকে আমার বোন "

উপস্থিত সবাই রঞ্জিত মাস্টারের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো।নিজেদের ভুল স্বীকার করলো।রঞ্জিত মাস্টারের বোধহীন মুখে যেন একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

গল্প #প্রায়শ্চিত্ত
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয় 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ